প্রিয় বন্ধুগণ,
ভাবতে অবাক লাগছে যে "বাইশে শ্রাবন (Baishe Srabon)" এর একটাও review internete খুঁজে পেলাম না, তাই ভাবলাম নিজেই একটা REVIEW লিখে ফেলি. অন্তত এই সিনেমাটার এটুকু প্রাপ্য.
সত্যি বলতে বাংলা সিনেমার যা হাল তাতে বিশেষ কেউ খেয়াল রাখে না যে কোন বইটা আসলো আর কোনটা গেল. কিন্তু বহুদিন পর এই সিনেমাটা দেখার পর মনে হলো একটু আলাদা ধরনের কিছু একটা dekhlam.
প্রথমেই বলব এই সিনেমা বাঙালির সিনেমা. হায়দ্রাবাদ এ বসে সিনেমাটা দেখতে দেখতে অনেক সময়েই হারিয়ে যাচ্ছিলাম উত্তর কলকাতার অলিতে গলিতে. বই এর ছন্দ আর প্রেখ্যাপটে মনে হচ্ছিল এটা একটু আলাদা, একটু কাছের, একটু যেন সর্বত্র বাঙালিয়ানা লুকিয়ে আছে, যার জন্য এই সিনেমাটা অন্য একটা হিন্দী সিনেমার চেয়ে আমার কাছে অনেক বেশি বেশি প্রিয় করে তুলেছে. এই বাঙালিয়ানার ছোয়াটাই বোধহয় আমরা সবাই খুঁজে বেড়াই আর বারে বারে হতাশ হই.
সিনেমার বিষয় বস্তু একটা সিরিয়াল কিলিং আর তার তদন্তে থাকা প্রতিটি চরিত্র একেবারে রক্তে-মাংশে গড়া. পরমব্রত পুলিশ অফিসার এর ভূমিকায়. সে কোথাও একজন স্বাভিমানী অফিসার, কোথাও বা একজন প্রেমিক, কোথাও বা আমাদের মতই একজন দোষ গুনে ভরপুর বাঙালি. সিরিয়াল কিলিং এর তদন্তে যখন সে কার্যত ব্যর্থ, তখন তাকে অগ্যতা শরনাপন্য হতে হয় উচ্চ্যশিখ্যিত কিন্তু বিতারিত এক বদমেজাজি পুলিশ অফিসার এর কাছে. বহুদিন নির্বাসিত, মানুষিক ভাবে নিসঙ্গ, পুরনো পরিতক্ত উত্তর কলিকাতার একটা রাজবাড়িতে পরে থাকা এই চারিত্যটি সবচেয়ে অন্ধকার আর সবচেয়ে আশ্চর্যজনক. সর্বহারা এই জিনিয়াসএর ভূমিকায় প্রসেনজিত একেবারে ফাটিয়ে দিয়েছে. অভিনয়ের লড়াই এ পাল্লা দিয়ে লড়েছে গৌতম ঘোষ, তিনি প্রতিনিধিত্য করেছেন বাংলার কোনে কোনে লুকিয়ে থাকা সেই সব মহান কবিদের যারা প্রতিনিয়ত সৃষ্টি করে চলেছেন সাহিত্যের সম্ভার অথচ প্রকাশকের ব্যবসায়িক মস্তিস্কে তাদের রচনার কোনো মূল্য নেই. প্রচন্ড অর্থাভাবে মানসিক ও আর্থিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে কোথাও কোনো অন্ধকার বস্তিতে যারা পচে গলে মৃতপ্রায়. তবে কি এমন এ এক লেখক প্রচন্ড আক্রোশে অভিযান করে চলেছেন কলকাতার অন্ধকার রাতে, ফুটিয়ে তুলতে চাইছেন তার কবিতার প্রতিটি লাইন প্রতিটি মৃত্যুর মাধ্যমে, নাকি আরও গভীর কোনো ষড়যন্ত্র? এখানেই "বাইশে শ্রাবন" একটা থ্রিলারএর মর্যাদা দাবি করেছে.